-->

বিপদে অস্থির না হয়ে ধৈর্যের সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।

ঘটনা ১ :

এক ছোট্ট বালক ইঁদুরের গর্তের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বালকটির দুটি দাঁত পড়ে গেছে। সে দাঁত দুটি ইঁদুরের গর্তে ফেলবে। তার দাদীও তার সাথে আছে। ছোট বাচ্চাদের প্রথম প্রথম যে দাঁতগুলো পড়ে যায়, সেগুলো ইঁদুরের গর্তে ফেললে নাকি পরবর্তীতে আরো ভালো দাঁত ওঠে। এটা বালকের দাদীর দৃঢ় বিশ্বাস। ইঁদুরের গর্তে দাঁত ফেলতে ফেলতে তারা একটা ছড়াও বলতে লাগল, ‘’ইঁদুর ভাই, ইঁদুর ভাই তোমার ছোট দাঁতগুলো দাও আর আমার বড় দাঁতগুলো নাও।‘’ 

কয়েকমাস পর বালকটির নতুন দাঁত উঠল। বাচ্চাদের দুধদাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত গজালে দেখতে যেমন সুন্দর লাগে, তেমনি দাঁতগুলোও অনেক মজবুত হয়। ঐ বালকটির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। বাচ্চাটির নতুন ঝলমলে দাঁত দেখে ঐ পরিবারের সবাই বেজায় খুশি। বাচ্চাটির দাদী গর্ব করে বলতে লাগল, ‘’আমি ওর পড়ে যাওয়া সব দাঁত ইঁদুরের গর্তে দিয়েছিলাম। এজন্যই এত ভালো দাঁত উঠেছে।‘’ 

ঘটনা ২ :

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে একটি ছোট্ট মেয়ে। পাশেই বসে আছেন এক দরিদ্র শিক্ষক। মেয়েটি কয়েকদিন ধরে রক্তবমি করছে। ডাক্তাররা মেয়েটির বাঁচার আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছেন। দরিদ্র শিক্ষক মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আজ পুরোপুরি নিঃস্ব। 

হাসপাতাল থেকে মেয়েটিকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তার অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকেই শিক্ষককে পরামর্শ দিচ্ছেন, বড় কোনো মাজারে গিয়ে সন্তানের জন্য প্রাণভিক্ষা চাইতে। মাজারের মৃত ব্যক্তি নাকি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে রোগীকে সুস্থ করায়। কিন্তু শিক্ষক মাজারে গিয়ে প্রাণভিক্ষা চাইতে নারাজ। তিনি সবাইকে বলেন, ‘’কবরের মৃত ব্যক্তি তো দুনিয়ার অবস্থা জানতেই পারে না, সে কিভাবে আমার মেয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবে? আর প্রাণভিক্ষা চাইব সরাসরি আল্লাহর কাছে। কারো মাজারে গিয়ে চাইলে কবুল হবে—এটা বিশ্বাস করার নামই তো শিরক।‘’ 

কিছুদিন পর মেয়েটি মারা গেল। অনেকেই বলাবলি করতে লাগল, মাজারে গেলে হয়তো বেঁচে যেত মেয়েটি। 

সম্মানিত পাঠক, উপরের ঘটনা দুটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা না করে আসুন ইবলিশ শয়তান নিয়ে একটু আলোচনা করি। শয়তানের মূল লক্ষ্য—মানুষকে জাহান্নামী বানানো। কিন্তু মানুষের ছোট ছোট গুণাহ দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। শয়তান এটা ভালোভাবেই জানে। এজন্য শয়তান চায়, যেভাবেই হোক মানুষ যেন শিরকে লিপ্ত হয়। এ কাজকে সফল করার জন্য সে অসংখ্য শিরকের ডালপালা ছড়িয়ে রেখেছে। মানুষ যখন রোগ-শোক কিংবা কোনো বিপদে পড়ে, তখন শয়তানের পক্ষে মানুষকে শিরকে লিপ্ত করানো খুব সহজ হয়ে যায়। 

আসুন, শয়তানের এই ভয়াবহ ফাঁদ থেকে সতর্ক হই। কবরস্থ মৃত ব্যক্তির কাছে কোনো কিছু চাওয়া, ইঁদুর-পেঁচা কিংবা কোনো জীবজন্তুর কাছে কিছু চাওয়া, অথবা কোনো জড় বস্তুর কাছে কিছু চাওয়ার অর্থই হলো আপনি সুস্পষ্টভাবে শিরক করছেন। আপনি যত আমল কিংবা পুণ্যের কাজ করুন না কেন, যদি শিরক থেকে তওবা না করে শিরকে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মারা যান, তবে পরকালে আপনার নাজাত পাওয়া কঠিন। পৃথিবীতে যত রকম জঘন্য পাপ আছে, তার মধ্যে শিরক সবচেয়ে জঘন্যতম পাপ।  

শিরক কেন এত জঘন্য? নিজেই একটু মিলিয়ে নিন তো। মনে করুন, আপনি বিরাট ধনী ব্যক্তি। আপনার দশজন দাস-দাসী আছে, অনেকগুলো জীবজন্তু আছে। আপনি আপনার দাস-দাসীদের হুকুম দিলেন, ‘’তোমাদের ভরণ-পোষণসহ সবকিছুর দায়িত্ব আমার। শুধু আমার কথা মেনে চলবে এবং তোমাদের কোনো সমস্যা হলে আমাকেই জানাবে। আমার যে সম্পদ আছে তাতে তোমাদের মতো আরো বিশহাজার দাসদাসী আমি রাখতে পারব।‘’ 

আপনি সিসি ক্যামেরা দিয়ে সবাইকে মনিটরিং করছেন।  কিছুদিন যেতে না যেতেই আপনি দেখলেন, দাসদাসীরা আপনার কথা ঠিকমতো শুনছে না। কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদও করছে। আপনি সবকিছু ধৈর্য ধরে দেখতে লাগলেন। 

কিছুদিন পর দুটি দৃশ্য দেখে আপনি থমকে গেলেন। দেখলেন একজন দাস আপনার পোষা ছাগলের কাছে বলছে, ‘আমার সমস্যাটা সমাধান করে দাও।‘ আবার দেখতে পেলেন, অন্য একজন দাসী একটা মৃত কবরের পাশে বসে কাঁদছে। এই কবরটি কয়েকবছর আগে মারা যাওয়া আপনারই এক দাসের। ঐ দাসীটি কবরের পাশে কাঁদতে কাঁদতে মৃত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলছে, ‘আপনি আমাদের মালিকের খুব প্রিয় ছিলেন। আপনি আমাদের মালিককে বলুন আমার সমস্যাটা যেন সমাধান করে দেয়।‘ 

এবার বলুন তো, আপনি ঐ দুজন দাসদাসীকে কি স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মানুষ ভাববেন? নাকি ভাববেন ওদের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে? আর যদি এরপরও ঐ দুজন দাসদাসী নিজেদের স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মানুষ এবং আপনার প্রতি অনুগত বলে দাবি করে, তবে কি তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন নাকি তিরস্কৃত করবেন? এরপরও যদি আপনি তাদের পুরস্কৃত করেন, তবে কি আপনার ন্যায়বিচারের সক্ষমতাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? 

মহান আল্লাহপাক যেমন দয়ালু, তেমনি উত্তম ন্যায়বিচারক। আসমান-জমিনের সবকিছুর একক কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই। তিনি প্রতিটি জীবের কথা সরাসরি শুনতে পান। যেকোনো মানুষের কথা যেমন সরাসরি শুনতে পান, তেমনি একটা পিপীলিকার কথাও তিনি সরাসরি শুনেন।  তিনি বিপদ দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। বিপদের মাধ্যমে মানুষের পূর্বের গুণাহগুলোও ক্ষমা হতে থাকে যদি সে ধৈর্য ধরে। 

তাই আসুন, বিপদে অস্থির না হয়ে ধৈর্যের সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। আমাদের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য সরাসরি তাঁর কাছেই আর্জি জানাই। বিশ্বাস করুন, আপনি সিজদায় গিয়ে দু’ফোঁটা চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে তিনি আপনাকে নিরাশ করবেন না। যদি সেটা আপনার জন্য মঙ্গলজনক হয়, তবে তিনি অবশ্যই তা কবুল করবেন।

Baca juga

Post a Comment